Photo Credit : The Hindu
বার্তমান ত্রিপুরা ডেস্ক রিপোর্ট
১৯ জুলাই, ২০২৫
সম্প্রতি বাংলাদেশ কর্তৃক ৩৪ জন ভারতীয় জেলেকে গ্রেফতার করার ঘটনাটি ভারত-বাংলাদেশ মধ্যকার সম্পর্কের এক নতুন অনিশ্চয়তার দিক উন্মোচিত করেছে। কূটনৈতিক মহলে এই ঘটনাকে দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে “বোঝাপড়ার অভাব” হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দু’দেশের সম্পর্কে যে শৈত্যপ্রবাহ বইছে তার প্রেক্ষিতে।
ঘটনাটি ঘটেছে ১৪ এবং ১৫ জুলাই রাতের মধ্যবর্তী সময়ে, যখন ভারতের দুইটি মাছ ধরার ট্রলার — এফবি ঝড় ও এফবি মা মঙ্গলচণ্ডী — বাংলাদেশের মংলা বন্দরের নিকটে ধরা পড়ে। এই ট্রলারদুটিতে থাকা ৩৪ জন ভারতীয় জেলেকে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ আটক করে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, “ঘটনার খবর পাওয়ার পরই ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন কূটনৈতিক পথে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে কনস্যুলার অ্যাক্সেসের আবেদন জানায়। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছি যেন জেলেদের নিরাপদ এবং দ্রুত প্রত্যাবর্তন সম্ভব হয়।”
২০১৪ সালের সীমানা নির্ধারণ কিন্তু বাস্তব সংকট বহাল
২০০৯ সালে বাংলাদেশ ভারতের বিরুদ্ধে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতে আবেদন করে এবং ২০১৪ সালে তার নিষ্পত্তি হয়। তবে ঐ সীমানা চিহ্নিত হলেও জলে দৃশ্যমান কোন চিহ্ন না থাকায় প্রায়শই জেলেরা অনিচ্ছাকৃতভাবে সীমা লঙ্ঘন করে ফেলে।
২০২৪ সালের শীতকালেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল যেখানে দুই দেশ মিলিয়ে মোট ১৮৫ জন জেলে গ্রেফতার হয়েছিলেন। এর মধ্যে জানুয়ারি ৫ তারিখে দুই দেশ ৯৫ জন ভারতীয় ও ৯০ জন বাংলাদেশি জেলে বিনিময় করে।
“অলিখিত সমঝোতা”র অবসান?
দীর্ঘদিন ধরেই দুই দেশের মধ্যে একটি অলিখিত সমঝোতা ছিল — সাধারণ জেলেদের সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনাকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হতো এবং তাদের দীর্ঘকাল আটকে না রেখে দ্রুত মুক্তি দেওয়া হতো। কারণ এই অঞ্চলের জেলেরা আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে সীমানা নির্ধারণ করতে পারেন না।
কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইন প্রয়োগে কড়াকড়ি দেখা যাচ্ছে এবং এর ফলে ভারতীয় জেলেদের দীর্ঘ সময় ধরে আটকে রাখা হচ্ছে। ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, এই পরিবর্তনশীল মনোভাব একটি রাজনৈতিক সংকেত বহন করছে যা ভবিষ্যতে আরও দ্বিপাক্ষিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
উপসংহার
জেলেদের এই গ্রেফতারের ঘটনা কেবলমাত্র একটি সামুদ্রিক সীমানা লঙ্ঘনের প্রশ্ন নয়, বরং এটি এখন দুই প্রতিবেশী দেশের কূটনৈতিক বোঝাপড়া, আস্থার ঘাটতি এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের এক জটিল প্রতিফলন। এই পরিস্থিতিতে উভয় দেশের উচিত দ্রুত ও মানবিক উপায়ে সমাধানসূত্র খুঁজে বের করা, যাতে নিরীহ জেলেরা রাজনৈতিক টানাপোড়েনের বলি না হয়।
📌 আরও খবরের জন্য ভিজিট করুন: www.bartamantripura.com
📢 তাজা খবর, সঠিক খবর — বার্তমান ত্রিপুরা
Leave a Reply