bartamantripura.com

প্রতিদিনের ত্রিপুরা,বর্তমান ত্রিপুরা – ত্রিপুরার কথা, প্রতিদিনের বার্তা।

ত্রিপুরার আনারস শিল্পে নতুন দিগন্ত, আসছে ফল প্রক্রিয়াকরণ কারখানা

✍️ BartamanTripura প্রতিবেদক | কুমারঘাট | জুলাই ১৩:
ত্রিপুরার সুস্বাদু আনারস বহুদিন ধরেই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিতি অর্জন করেছে। এবার রাজ্য সরকার এই সম্ভাবনাময় খাতকে আরও গতিশীল করতে উদ্যোগী হয়েছে। কুমারঘাটে আয়োজিত এক বিশেষ আনারস উৎসবে কৃষিমন্ত্রী রতনলাল নাথ ঘোষণা করেছেন — রাজ্যে গড়ে তোলা হবে একটি আধুনিক ফল প্রক্রিয়াকরণ কারখানা, যেখানে মূলত আনারস প্রক্রিয়াকরণ হবে পিপিপি (PPP) মডেল-এ।

সরকারের মতে, এই কারখানা স্থাপনের মধ্য দিয়ে কেবলমাত্র ফল সংরক্ষণ বা রপ্তানি নয়, রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতি, কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে।

আনারস: ত্রিপুরার গর্ব, এখন রাজ্যিক ফল

উৎসব উদ্বোধনকালে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “ত্রিপুরার আনারসের গুণ ও স্বাদের তুলনা হয় না। রাজ্যের কিউ এবং ক্যুইন — এই দুই ভ্যারাইটির আনারস জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে জনপ্রিয়।”

তিনি জানান, রাষ্ট্রপতির হাত ধরে আনারসকে ইতিমধ্যেই ‘ত্রিপুরার রাজ্যিক ফল’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা রাজ্যের কৃষিভিত্তিক পরিচিতিকে আরও মজবুত করেছে।

উৎপাদন থেকে রপ্তানি: এক নজরে পরিসংখ্যান

বর্তমানে রাজ্যে ৩,৬৫,০০০ কানিতে বিভিন্ন ফলের চাষ হয়, যার মধ্যে কিউ ভ্যারাইটির আনারস ৫৩,৭০০ কানিতে এবং ক্যুইন ভ্যারাইটির আনারস ২২,০০০ কানিতে উৎপন্ন হয়।

২০১৮-১৯ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষ পর্যন্ত দুবাই, কাতার ও ওমান-সহ আন্তর্জাতিক বাজারে ৭৩.১৫ মেট্রিক টন আনারস রপ্তানি করা হয়েছে। যা থেকে স্পষ্ট, রাজ্যের আনারস বিশ্ববাজারে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করছে।

ক্রেতা-বিক্রেতা সংযোগে নতুন সম্ভাবনা

ত্রিপুরা সরকারের উদ্যোগে ৯ জুলাই আগরতলায় অনুষ্ঠিত ক্রেতা-বিক্রেতা মিলনমেলায় (Buyer-Seller Meet) বহু বাইরের সংস্থাও রাজ্যের অর্গানিক ফল ও ফসলের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, এই ধরনের মিট রাজ্যের কৃষকদের নতুন বাজার তৈরি করতে সহায়ক হবে, যা মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াই সরাসরি বিক্রয় ও লাভের সুযোগ এনে দেবে।

আনারসের প্রক্রিয়াকরণ: ভবিষ্যতের চালিকাশক্তি

ত্রিপুরার আনারসের আন্তর্জাতিক চাহিদা যত বাড়ছে, ততই দরকার হয়ে পড়েছে স্থানীয় পর্যায়ে প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট। আনারস সংরক্ষণ, জুস, ক্যান্ডি, স্কোয়াশ, ড্রাই ফ্রুট— এ ধরনের বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে আনারসের বহুমূল্য সংযোজন (value addition) সম্ভব।

মন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, “আমরা কেবল আনারস ফল হিসেবে বিক্রি করতে চাই না, বরং তার প্রক্রিয়াকরণ করে কৃষকদের জন্য স্থায়ী আয় ও কর্মসংস্থানের পথ খুলতে চাই।”

শুধু ফল নয়, উৎসবও মানবিকতার প্রতীক

উৎসবের অংশ হিসেবে ইয়ং ডার্লং অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে একটি রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ৩১ জন স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন। কৃষিমন্ত্রী নিজে রক্তদাতাদের উৎসাহিত করেন, যা উৎসবের মানবিক দিকটিকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে।

বিশেষ অতিথিদের মতামত

অনুষ্ঠানে তপশিলিজাতি কল্যাণ মন্ত্রী সুধাংশু দাস বলেন, “ত্রিপুরার আনারস শুধু অর্থনীতিই নয়, রাজ্যের আত্মপরিচয়। এখন দরকার এই সম্পদকে প্রক্রিয়াজাত করে আন্তর্জাতিক মানে রূপান্তরিত করা।”

বিধায়ক ভগবান চন্দ্র দাস, ভারত সরকারের ডোনার মন্ত্রকের যুগ্মসচিব অংশুমান দে, কৃষি সচিব অপূর্ব রায়, এবং ভূমি সংরক্ষণ ও উদ্যান পালন দপ্তরের অধিকর্তা দীপক কুমার দাস-সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ এই উৎসবে অংশ নেন।

উপসংহার

ত্রিপুরার কৃষি এখন শুধু ফসল উৎপাদনেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং রপ্তানি, প্রক্রিয়াকরণ এবং কৃষিপণ্যকে বাজারজাতকরণের দিকেও এগিয়ে চলেছে। কুমারঘাটে আনারস উৎসব ছিল তারই এক উদাহরণ — যেখানে ফলের পেছনে লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনার কথা, কৃষকের মুখে হাসি ফোটানোর কথা, আর গোটা রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশের রূপরেখা স্পষ্ট হয়েছে।


📌 প্রতিবেদন: BartamanTripura.com নিউজ ডেস্ক
📷 আরও আপডেট, ভিডিও ও ছবি পেতে আমাদের ফলো করুন:
➡️ Facebook: Bartaman Tripura
➡️ YouTube: Bartaman Tripura

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *