আগরতলা, ১৫ জুলাই: ত্রিপুরা রাজ্য সরকার ‘এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা’ গড়ার লক্ষ্যে অবিচলভাবে কাজ করে চলেছে, যার মূল ভিত্তি হলো রাজ্যের জাতি-জনজাতি অংশের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি সুদৃঢ় করা এবং তাদের সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা। ১৪ জুলাই জিরানীয়ার বেলবাড়িতে অনুষ্ঠিত ‘ধরতি আবা জনভাগীদারি অভিযান’-এর পশ্চিম ত্রিপুরা জেলাভিত্তিক সচেতনতা ও সহায়তা প্রদান শিবিরের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বেলবাড়ি গোবিন্দ কমিউনিটি হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য অতিথিরা বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং সুবিধাভোগীদের হাতে ৫৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন। এছাড়াও, কৃষি, মৎস্য, প্রাণীসম্পদ বিকাশ সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রকল্পের অধীনে পাওয়ারটিলার, আইসবক্স, থ্রি-হুইলার, পেডি হুইলার, আয়ুষ্মান কার্ড, এসটি কার্ড সহ বিভিন্ন উপকরণ আনুষ্ঠানিকভাবে সুবিধাভোগীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
জনজাতিদের আত্মনির্ভর করতে ব্যাপক উদ্যোগ
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং জনজাতিদের আত্মনির্ভর করে তোলার জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ‘ধরতি আবা জনজাতীয় গ্রাম উৎকর্ষ অভিযান’ এর মাধ্যমে রাজ্যে ৩৯২টি জনজাতি অধ্যুষিত গ্রামের উৎকর্ষ সাধনের কাজ চলছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের মাধ্যমে ৮১.৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০টি নতুন ছাত্রাবাস, ২টি মাল্টিপারপাস মার্কেটিং সেন্টার, ১৬টি আবাসিক ছাত্রাবাস, ৯টি বনাধিকার সেল গঠন করা হবে। এছাড়াও, ১৪.২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১৯টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, ১.১২ কোটি টাকা ব্যয়ে জনজাতি এলাকায় ২৮ হেক্টর জলাশয়ে মাছ চাষের ব্যবস্থা এবং ৪২.৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭,৬৭৭টি পরিবার ও ৫১২টি স্থানে বিদ্যুতায়নের কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই ২৮টি মোবাইল ইউনিট চালু হয়েছে। তিনি জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় পানীয়জলের সংযোগ, কর্মসংস্থানের সুযোগ, এডিসি এলাকার জন্য অর্থ বরাদ্দ এবং জনজাতিদের সংস্কৃতির বিকাশে রাজ্য সরকারের উদ্যোগের কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
সমাজকল্যাণ ও স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে জোর
মুখ্যমন্ত্রী ‘নেশামুক্ত ত্রিপুরা’ এবং ‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ’-এ রাজ্য সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরেন এবং নেশামুক্ত, এইচআইভি মুক্ত ত্রিপুরা গঠনে এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সকল অংশের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী টিংকু রায় বলেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে জনজাতি অংশের মানুষের ঘরে ঘরে বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা জানান, জনজাতি অংশের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার সুবিধার্থে ২০১৮ সালের পর ২১টি একলব্য বিদ্যালয় চালু করা হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার কাজের মধ্য দিয়ে জনজাতিদের প্রকৃত উন্নয়ন ঘটাতে বদ্ধপরিকর।
বিভিন্ন দপ্তরের পরিষেবা স্টল থেকে ব্যাপক সাড়া
পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এই শিবিরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ডা. বিশাল কুমার, উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের সচিব শসী কুমার, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার এসপি কিরণ কুমার কে, বেলবাড়ি বিএসি’র চেয়ারম্যান রাকেন দেববর্মা, বিশিষ্ট সমাজসেবী বিপিন দেববর্মা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাধিপতি বিশ্বজিৎ শীল।
এই শিবিরে বিভিন্ন দপ্তরের ২৮টি পরিষেবা প্রদান স্টল খোলা হয়, যা মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য অতিথিরা পরিদর্শন করেন। আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৪৬৯টি আধার পরিষেবা, ৩৬৭টি আয়ুষ্মান ভারত কার্ড রেজিস্ট্রেশন, ৪১১টি কাস্ট সার্টিফিকেট, ১১৭টি কিষাণ ক্রেডিট কার্ড, ৫৮টি পেনশন যোজনা, ১৮৫টি প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা, ১০৭টি প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা, ৯৩টি প্রধানমন্ত্রী জীবনজ্যোতি বীমা যোজনা, ৮৪টি প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি যোজনা, ১০৮টি প্রধানমন্ত্রী মাত্র বন্ধনা যোজনা, ২৬৬টি প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা এবং ৩৮৪টি রেশনকার্ডের আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়। স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে ৬৫৪ জনের সিকেল সেল টেস্ট করানো হয় এবং পোষণ ভাটিকা প্রকল্পের মাধ্যমে ২৩৭ জনকে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করা হয়।
এই ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে ত্রিপুরা সরকার জনজাতিদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে এবং তাদের আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে, যা ‘এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা’ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে।
Leave a Reply